জিসান তাসফিকঃ একসময় রেল ভ্রমণে টিকেট পাওয়া খুব দুষ্কর ছিল। বর্তমানে ই-সেবা চালু হওয়ায় কমেছে যাত্রীদের ভোগান্তি। রেলসেবা আধুনিকায়নের ফলে টিকেটের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়না। গত ১৬ আগস্ট থেকে রেলভ্রমণে যুক্ত হয়েছে নতুন পদ্ধতি ‘টিকেট যার ভ্রমণ তার।’ এতে দালালদের কালোবাজারির ছোবল থেকে মুক্ত হয়েছে সাধারণ জনগণ।
ইতোপূর্বে রেলপথ মন্ত্রনালয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। ২০১১ সালে তা পৃথক করে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। পরবর্তীতে রেলসেবায় যুক্ত হতে থাকে আধুনিক পদ্ধতি। বাংলাদেশ সরকার রেলওয়েতে ২০১২ সালের ২৯ মে চালু করে ই-সেবা। যা রেলওয়ে আধুনিকায়নে ব্যপক ভূমিকা রেখেছে। শুধু টিকেটই নয় ই-সেবার মাধ্যমে যাত্রীরা ঘরে বসেই পাচ্ছে রেল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতে ব্যবহার করতে হবে রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট। নিজস্ব পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ ব্যবহার করে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবে। একজনের টিকেট কোনভাবেই অন্যজন ব্যবহার করতে পারবেনা।
রেল পথের যাত্রা শুরু ব্রিটিশ শাসনামল থেকে। ভারত উপমহাদেশে ১৮৪৯ সালে রেল পথের যাত্রা শুরু। তারপরে ব্রিটিশ সরকার ধীরে ধীরে ভারতবর্ষ জুড়ে রেলপথ স্থাপন করে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রেলপথ আসার অন্যতম রাজনৈতিক কারণ ছিল বার্মার (বর্তমানে মায়ানমার) সাথে কলকাতার যোগাযোগ। এরই ধারাবাহিকতা ১৮৬২ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় সংযোগ স্থাপনের শুরু করে।
বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি রেলওয়ে স্টেশন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রেলপথ চালু হয়। রেলওয়ে বরাবরই সরকারি প্রতিষ্ঠান। কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়।
রেলওয়েতে সরকার প্রদত্ত কোনো নিয়মকানুন ভঙ্গ করা আইনত অপরাধ। যা ফৌজদারি আইনের অন্তর্গত। তবে ক্ষেত্র বিশেষে দেওয়ানী আইন হিসেবে কার্যকর হয়। রেলওয়ে আইন পরিচালিত হয় ‘রেলওয়ে আইন ১৮৯০’ এর মাধ্যমে। যার প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে রেলওয়ে পুলিশ।
রেলওয়ে আইনের ৬৮ ধারা অনুযায়ী টিকেট ছাড়া রেল ভ্রমণ সসম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের ১১২ ধারা অনুযায়ী ভ্রমণকারী যা অতিক্রম করেছে তার দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হবে অথবা তিন মাসের জেল। বর্তমানে সংযুক্ত নতুন পদ্ধতিতে অন্যের টিকেটে কোন ব্যক্তি ভ্রমণ করলে জালিয়াতি ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হবে এবং আইনত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রেলওয়ে বিভাগের জন্য সরকার প্রদত্ত নিয়ম ও আধুনিক প্রযুক্তিগত সেবা গ্রহণ করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
লেখক- শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়